রাজশাহী পাউবোর সেই বিতর্কিত প্রকৌশলীকে শাস্তিমূলক বদলী, সরকারি গাড়ি নিয়েই তদবিরে ঢাকায় অবস্থান

রাজশাহী পাউবোর সেই বিতর্কিত প্রকৌশলীকে শাস্তিমূলক বদলী, সরকারি গাড়ি নিয়েই তদবিরে ঢাকায় অবস্থান

রাজশাহী পাউবোর সেই বিতর্কিত প্রকৌশলীকে শাস্তিমূলক বদলী, সরকারি গাড়ি নিয়েই তদবিরে ঢাকায় অবস্থান

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পওর বিভাগের বিতর্কিত নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলমকে অবশেষে শাস্তিমূলক বদলী করা হয়েছে। এর আগে দুই দফা বদলী করা হলেও অদৃশ্য খুটির জোরে রাজশাহীতেই থেকে অনিয়মের মাত্রা বাড়িয়েছিলেন তিনি।

অবশেষে কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের পর সর্বশেষ ২০ আগস্ট বাপাউবো সদর দফতরের উপ-সচিব (প্রশাসন) সৈয়দ মাহবুবুল হক সাক্ষরিত এক আদেশ তাকে বদলি করা হয়। ওই আদেশে বলা হয়, তিন কর্মদিবসের মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলমকে বাপাউবোর আইসিজেড ঢাকায় নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) হিসেবে যোগদান করতে হবে।

বাপাউবোর মহপরিচালকের অনুমোদনক্রমে এই বদলীর আদেশ জারি করা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। সে অনুযায়ী সোমবার তার যোগদানের কথা। তবে প্রাপ্ত তথ্যমতে যোগদান না করে আবারো বদলী ঠেকাতে তৎপরতা শুরু করেছেন। তিনি রাজশাহী অফিসের গাড়ি নিয়েই ঢাকায় বর্তমানে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

পাউবো সূত্র জানায়, বদলী আদেশের পর কর্মস্থলের গাড়ি ব্যবহারের অনুমতি না থাকলেও তিনি গাড়ি ব্যবহার করে এখন ঢাকার বদলী আদেশ ঠেকাতে তৎপরতা শুরু করেছেন। এর আগেও একই কান্ড ঘটিয়েছেন বিতর্কিত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কোহিনুর আলম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেটকে হাত করে যাইচ্ছে তাই করে যাচ্ছিলেন রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলম। কর্মচারি পেটানো থেকে শুরু করে ঠিকাদারদের সঙ্গে অনৈতিক লেনদেন, বেপরোয়া আচরণ, বিভিন্ন কাজের ওয়ার্ক অর্ডারে জালিয়াতি ছাড়াও তার বিরুদ্ধে প্রাক্কলনে জালয়াতি এবং ই-টেন্ডারিয়ে টেম্পারিং করে অবৈধভাবে দর প্রদানের মাধ্যমে পূর্ব নির্ধারিত ঠিকাদারকে কাজ প্রদানের অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, কোহিনুর আলমের অনৈতিক কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ অধিনস্ত ঠিকাদার, কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা। সর্বশেষ বদলীর আদেশে রাজশাহী পাউবোর সংশ্লিষ্টরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রাজশাহী পাউবোর ঠিকাদাররা জানান, কোহিনুর আলম গত ৬ মাস ধরে রাজশাহী পওর বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। রাজশাহীতে যোগদানের পর থেকে তিনি সরাসরি ঠিকাদারদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহনসহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে একাধিকবার বদলী করা হলেও কালো টাকার জোরে বদলী ঠেকিয়ে রাজশাহীতে এসে আবারো অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহীর ঠিকাদার সমিতির কার্যকরি কমিটির উপদেস্টা আসাদুল্লাহ ও সদস্য নূর-ই-আলম সিদ্দিকি জানান, ‘প্রতিটি কথায় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেনে আনেন তিনি। অথচ বাস্তবে সরকারি বিরোধী ঠিকাদার পরিবেস্টিত হয়ে রাষ্ট্র ও পাউবো বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকেন। সরকার ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি খুন্ন করেন। তার দফতরে সব সময় বহিরাগত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ঘিরে থাকেন। ফলে কোনো কাজের জন্য গেলে ঠিকাদাররা তার দফতরে প্রবেশ করতে পারেন না। তারা অভিযোগ করেন, বর্তমানে তিনি পাউবোর রাজশাহী পওর বিভাগ ‘ব্যক্তিগত বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিনত করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এর আগে কোহিনুর আলম ২০০৫ সালে বাপাউবোতে যোগদানের পর চাঁপাইনববাগঞ্জ ও বগুড়ায় উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালনকালে শুরু হয় তার কুকর্ম। পরবর্তিতে তিনি সাতক্ষীরা ও ফেনীতে দায়িত্ব পালনকালেও নৈরাজ্য সৃস্টি করেন। শান্তিসরূপ তাকে একাধিকবার মাঠ পর্যায় থেকে ঢাকায় ক্লোজড করাও হয়। এরপর ক্ষমতার দাপট ও বোর্ডে ভুল তথ্য দেখিয়ে তিনি চলে আসেন রাজশাহীতে। এরপর অনৈতিক ও নৈরাজ্যের কারনে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি তাকে পুনরায় শান্তিমুলক ঢাকা সিইআইপিতে বদলী করা হয়। তবে আবারো অদৃশ্য খুটির জোরে তার বদলী আদেশ স্থগিত করে রাজশাহীতেই থেকে যান।

শুধু তাই নয়। বদলী আদেশ স্থগিতের পর রাজশাহী এসে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি। এবার অধিনস্ত কর্মীচারীদের লাঞ্চিত করার অভিযোগ উঠে। এ প্রেক্ষিতে অধিনস্ত কমচারিরা নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শণ ও অপসারন দাবিও করে। পাউবো রাজশাহীর পওর সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কাছেও একাধিক অভিযোগ করেছেন কর্মচারিরা।

অভিযোগে আরো জানা যায়, নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনূর আলম অফিসে বহিরাগতদের নিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরী করেছেন। কাউকে কোনো কোয়াক্কা করেন না। অধিনস্ত কর্মচারিরা সারাক্ষণ তার হমকি-ধামকির মুখে তটস্ত হয়ে থাকেন। যখন-তখন কর্মচারিদের ওপর মারমুখি আচরন করেন। অকথ্য গালিগালাজ করে চরম হয়রানী ও কথায় কথায় চাকরিচ্যুতির হুমকি দেন।

রাজশাহী চেম্বারের সাবেক পরিচালক জামাত খান বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলম রাজশাহীতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দরপত্রে অনিয়ম, অনৈতিক কর্মকান্ড ও স্বেচ্চাচারি হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, বারবার বদলী করা হলেও তিনি তা ঠেকিয়ে আবার ফিরে আসেন। এবার যেন তেমন না হয় এ নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রীর দৃস্টি আকর্ষন করে তিনি বলেন শুধু বদলী নয় তার অপকর্মের জন্য উচ্চ পর্যায়ের তদন্তপূর্বক শান্তির আওয়ায় নিয়ে আসার দাবি জানান।

সার্বিক বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলমের সঙ্গে মোবাইলে যোগযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে রয়েছেন বলে এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন নি। পাউবো রাজশাহী পওর সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমানও এ বিষয়ে ফোনে কোন কথা বলতে রাজি হন নি।

মতিহার বার্তা ডট কম- ২৪-০৮-২০২০

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply